Home > Reading Lamp >

ফেসবুক বটের ফেক রিয়্যাকশন এবং ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্ট

Feb 10, 2025 | Technology

ফেসবুকে একটি রাজনৈতিক পোস্ট, যেখানে "হা হা" রিয়্যাকশন পরিকল্পিতভাবে ব্যবহার করা হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে তুচ্ছ দেখানোর জন্য।

আপনি কি ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্টের শিকার?? ২০২৪ সালের একটি গবেষণা অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ৪৭% রিয়্যাকশন বট দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। রাজনৈতিক পোস্টের ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ৬০% ছাড়িয়ে যেতে পারে!২০২০ সালে, “The Guardian” এক প্রতিবেদনে জানায়, মার্কিন নির্বাচনে প্রায় ৫০ মিলিয়ন বট অ্যাকাউন্ট সক্রিয় ছিল।

আমরা অনেক সময় ফেসবুকে দেখি, কোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক ইস্যুতে হাজার হাজার লাভ বা লাইক রিয়্যাকশন রয়েছে। এতে মনে হয় পারে, বিষয়টি বেশ জনপ্রিয় ও গুরুত্বপূর্ণ, অসংখ্য মানুষ এর পক্ষে। আবার এই একই কৌশল উল্টোভাবে ব্যবহার করা হয় “হা হা” রিয়্যাকশনের মাধ্যমে, যাতে সিরিয়াস একটি ইস্যুকে তুচ্ছ বা হাস্যকর দেখানো যায়।

ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্ট কী?

ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্ট এমন একটি মানসিক প্রবণতা, যেখানে মানুষ কোনো কিছুর জনপ্রিয়তা দেখে সেটাকে গুরুত্বপূর্ণ বা সত্য মনে করে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এটি ভয়ংকরভাবে কাজ করে, কারণ অসংখ্য মানুষ অন্য মানুষের (এক্ষেত্রে ফেক একাউন্ট) হা হা বা লাভ রিয়েকশন দেখে সিদ্ধান্ত নেয়। তার আর এক অর্থ হচ্ছে আপনার যদি টাকা থাকে তাহলে আপনি একটা লেভেলে মানুষের মতামতকে ম্যনুপুলেট করতে পারবেন এই বট বাহীনিকে দিয়ে।

-ফেসবুক বটের ফেক রিয়্যাকশন: পরিসংখ্যান ও বাস্তবতা-

বিশ্বব্যাপী ফেসবুকের মোট ইউজারের প্রায় ৫% থেকে ১৫% অ্যাকাউন্টই ফেক বা বট (Statista, ২০২৪)। তবে কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, রাজনৈতিক পোস্টে এই সংখ্যা ২৫%-৩০% পর্যন্ত হতে পারে!

👉 ২০২০ সালে, “The Guardian” এক প্রতিবেদনে জানায়, মার্কিন নির্বাচনে প্রায় ৫০ মিলিয়ন বট অ্যাকাউন্ট সক্রিয় ছিল।

👉 ২০১৯ সালে, অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিটিউট দেখায়, অন্তত ৭০টি দেশ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ম্যানিপুলেশন করে।

👉 বাংলাদেশেও অনেক রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তি ফেক রিয়্যাকশন, কমেন্ট ও শেয়ার কেনে, যাতে মনে হয় তাদের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। অন্যদিকে পেইড ‘হা হা’ রিয়েকশনেরও প্রভাব অনেক

–ফেক ‘হা হা’ রিয়্যাকশনের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব—

বটের মাধ্যমে শুধু লাইক বা লাভ রিয়্যাকশন নয়, বরং “হা হা” রিয়্যাকশনও রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে—

✅ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে হালকা করে দেখানো হয়:

যখন কোনো গুরুতর রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার “হা হা” রিয়্যাকশন দেওয়া হয়, তখন সাধারণ মানুষ সেটাকে কম গুরুত্ব দেয় বা মজা হিসেবে দেখে।

✅ প্রতিপক্ষকে ছোট দেখানোর চেষ্টা:

কোনো নেতা বা দল যখন গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য দেয়, তখন বট আর্মি “হা হা” দিয়ে সেটাকে হাস্যকর দেখানোর চেষ্টা করে, যেন সাধারণ মানুষ সেটাকে সিরিয়াসলি না নেয়।

✅ গণআলোচনা ও সমর্থন বাধাগ্রস্ত করা:

যদি কোনো সত্যিকারের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা উঠে আসে, তাহলে “হা হা” রিয়্যাকশনের মাধ্যমে সেটাকে অপ্রাসঙ্গিক বা মজার বিষয় বানিয়ে দেওয়া হয়, যাতে মানুষ আর গভীরভাবে চিন্তা না করে।

রাজনৈতিক দলগুলোর ফেক রিয়্যাকশন কৌশল-

📌 ভুয়া জনপ্রিয়তা সৃষ্টি: নিজেদের পোস্টে ফেক লাভ বা লাইক দিয়ে জনগণের মধ্যে মিথ্যা জনপ্রিয়তার ধারণা তৈরি করা।

📌 বিরোধী দলকে হাস্যকর দেখানো: প্রতিপক্ষের গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে পরিকল্পিতভাবে হাজার হাজার “হা হা” রিয়্যাকশন দিয়ে সেটাকে তুচ্ছ বানানো।

📌 গুজব ও অপপ্রচার ছড়ানো: সুনির্দিষ্ট ইস্যুতে আতঙ্ক ছড়াতে বা জনমতকে বিভ্রান্ত করতে ফেক রিয়্যাকশন ব্যবহার করা।

এই সমস্যা থেকে বাঁচার উপায়

1️⃣ কোনো পোস্টে রিয়্যাকশনের সংখ্যা দেখে অন্ধভাবে বিশ্বাস করবেন না।

2️⃣ কমেন্ট পড়ুন, যাচাই করুন কে পোস্ট করেছে।

3️⃣ সন্দেহজনক “হা হা” রিয়্যাকশন থাকলে ভাবুন, এটি ইচ্ছাকৃত ম্যানিপুলেশন কি না।

4️⃣ বিশ্বস্ত সূত্র থেকে রাজনৈতিক ইস্যুগুলো যাচাই করুন।

5️⃣ নিজের মতামত গঠন করার আগে ভাবুন—আপনি কি সত্য যাচাই করছেন, নাকি ব্যান্ডওয়াগনে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন?

আপনার চিন্তা কি আসলেই আপনার? নাকি এটা বট আর্মির তৈরি করা একটি কৃত্রিম জনমত? চোখ খুলে রাখুন, সত্য যাচাই করুন। কারণ না হলে, আপনার মতামত অন্য কেউ নিয়ন্ত্রণ করবে! আপনি হবেন ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্টের শিকার!

More Articles

বিল গেটসের ভবিষ্যদ্বাণী: AI-র যুগে মানুষের দরকার ফুরিয়ে যাবে?

বিল গেটসের ভবিষ্যদ্বাণী: AI-র যুগে মানুষের দরকার ফুরিয়ে যাবে?

১০ বছরের মধ্যে AI অনেক ডাক্তার ও শিক্ষকের কাজ করে ফেলবে”—এমনটাই বলছেন মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস। মানুষের কাজ কি তাহলে ফুরিয়ে যাচ্ছে? জেনে নিন গেটসের ভবিষ্যদ্বাণী ও এর পেছনের যুক্তিগুলো এক সহজ ভাষায়।

read more
২০২৫: আমাদের শেষ স্বাভাবিক বছর? এআই যুগের পূর্বসন্ধ্যা

২০২৫: আমাদের শেষ স্বাভাবিক বছর? এআই যুগের পূর্বসন্ধ্যা

২০২৫ হতে পারে আপনার আমার শেষ স্বাভাবিক বছর। ChatGPT, Midjourney দিয়ে আমরা এখনো খেলছি—কিন্তু সামনে আসছে AGI ও Superintelligence, যা কেবল প্রযুক্তি নয়, মানব সভ্যতার নতুন সংজ্ঞা দিতে চলেছে।

read more
এক্সআর (XR): এআর (AR), ভিআর (VR) এবং এমআর (MR) এর পার্থক্য ও ব্যবহার

এক্সআর (XR): এআর (AR), ভিআর (VR) এবং এমআর (MR) এর পার্থক্য ও ব্যবহার

এক্সআর (XR) প্রযুক্তি কী এবং এটি কীভাবে আমাদের জীবনকে বদলে দিচ্ছে? অগমেন্টেড রিয়েলিটি (AR), ভার্চুয়াল রিয়েলিটি (VR), এবং মিক্সড রিয়েলিটি (MR) – এই তিনটি প্রযুক্তি একসাথে XR গঠন করে। শিক্ষা, বিনোদন, ব্যবসা, চিকিৎসা ও নির্মাণশিল্পে XR-এর বাস্তব ব্যবহার জানুন এই বিস্তারিত আর্টিকেলে!

read more
“আরিগাতো মানি” এবং “আলহামদুলিল্লাহ”

“আরিগাতো মানি” এবং “আলহামদুলিল্লাহ”

জাপানি বিলিয়নিয়ার Wahei Takeda বিশ্বাস করতেন, “আরিগাতো মানি” অর্থাৎ ধন্যবাদ জানিয়ে লেনদেন করলে সমৃদ্ধি বাড়ে। ইসলামেও বলা হয়েছে, শুকরিয়া আদায় করলে নেয়ামত বৃদ্ধি পায়। তাহলে, আমরা কি প্রতিটি আয়ে ও ব্যয়ে “আলহামদুলিল্লাহ” বলছি? 💰✨

read more

All Categories >>

Technology

Skills

Self-Dev

Religion

Health

Science