গত ফেব্রুয়ারিতে জনপ্রিয় টিভি শো “The Tonight Show”-তে জিমি ফ্যালনের সঙ্গে আড্ডায় গেটস বলছিলেন, এখনো কিছু কাজ আমরা শুধু মানুষের কাছ থেকেই পাই — যেমন ভালো চিকিৎসা বা দারুণ কোনো শিক্ষকের টিউশন। কিন্তু আগামী ১০ বছরে AI এতটাই এগিয়ে যাবে যে, এসব জিনিসও পাওয়া যাবে একদম ফ্রিতে, আর সবার জন্য সহজভাবে।
গেটস এটাকে বলছেন “ফ্রি ইন্টেলিজেন্স”-এর যুগ — মানে বুদ্ধি বা জ্ঞান আর শুধু বিশেষজ্ঞদের একচেটিয়া কিছু থাকবে না, বরং AI-এর মাধ্যমে সবার জন্য খুলে যাবে সেই দরজা।
গেটস স্বীকার করেছেন, এসব পরিবর্তন এত দ্রুত হচ্ছে যে কিছুটা ভয়ও লাগে। তিনি বলেন, “এটার কোনো সীমা নেই!” ভাবুন তো, AI যদি নিজের মতো শিখতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে, তখন আমাদের জায়গাটা কোথায়?
তবে কেউ কেউ আবার বলছেন, AI আমাদের কাজ কেড়ে নেবে না, বরং আমাদের আরও স্মার্ট করে তুলবে। কিন্তু আবার অনেকে বলছেন, যেসব কাজ আমরা করতাম — সেগুলোই AI করে ফেলবে। মানে, চাকরির বাজার পুরো কেঁপে উঠতে পারে।
AI মানে শুধু ভয় না, দারুণ সম্ভাবনাও
বিল গেটস কিন্তু AI নিয়ে মোটেও হতাশ না। বরং তিনি মনে করেন, AI দিয়ে আমরা এমন কিছু করতেও পারি, যেটা আগে স্বপ্নের মতো লাগত — যেমন ক্যান্সারের ওষুধ তৈরি, জলবায়ু সমস্যা মোকাবিলা, আর সবার জন্য ভালো মানের শিক্ষা।
তিনি মজার ছলে বললেন, “আমরা কখনোই চাইবো না AI এসে আমাদের হয়ে বেসবল খেলুক!” মানে কিছু কিছু জিনিস থাকবে শুধুই মানুষের জন্য। কিন্তু ঘর বানানো, জিনিসপত্র বানানো বা ফসল ফলানোর মতো কাজে AI অনেকটা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেবে।
গেটস বলেন, “আজ যদি আমাকে নতুন একটা ব্যবসা শুরু করতে বলা হতো, আমি নিশ্চিন্তে AI নিয়ে কিছু করতাম।” তিনি এখনকার তরুণদের বলছেন, “তোমরা AI নিয়ে কাজ করো, কারণ এটা তোমাদের সময়, তোমাদের সুযোগ!”
২০১৭ সালেই, গেটস বলেছিলেন — যদি আজকে নতুন করে শুরু করতে হতো, তাহলে তিনি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে কাজ করতেন। তখনও ChatGPT বা এমন কিছু ছিল না, কিন্তু গেটস বুঝেছিলেন, AI-ই হবে ভবিষ্যৎ।
আর ২০২৩ সালে তিনি OpenAI-কে একটা চ্যালেঞ্জ দেন — এমন এক AI বানাও, যে হাইস্কুল বায়োলজির পরীক্ষায় ফুল নম্বর পাবে! তিনি ভেবেছিলেন, ওদের ২-৩ বছর লাগবে। কিন্তু তারা সেটা করে ফেলল মাত্র কয়েক মাসে!
গেটস তখনই বুঝে যান, “এইটা হচ্ছে ১৯৮০ সালের গ্রাফিকাল ইউজার ইন্টারফেসের পর সবচেয়ে বড় প্রযুক্তিগত বিপ্লব!”
তাহলে কি সত্যিই আমাদের দরকার ফুরিয়ে যাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর এখনো কেউ জানে না। হয়তো অনেক কাজেই আমাদের আর দরকার হবে না, কিন্তু মানুষের অনুভূতি, নীতি, আর সৃজনশীলতা — এগুলো কি AI কখনোই পারবে?
সত্যি বলতে, এটা ভয় পাওয়ার মতোও, আবার দারুণ একটা সুযোগও। যারা এখনই শেখা শুরু করবে, তারাই হয়তো আগামী দিনের পথপ্রদর্শক হবে।